বই আলোচক বৃষ্টি রাণী দাস: বই প্রেমিক মানুষের প্রথম কাজ সুন্দর বই সিলেকশন করা। তারপর পড়া শুরু করা এবং পড়া শেষে বইয়ের ভালো মন্দ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় আমি লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর বৃষ্টি বিলাসরোমান্টিক উপন্যাসটি পড়েছি। বই সম্পর্কে হালকা ধারণা দিয়ে মূল আলোচোনায় চলে যাচ্ছি।
বইয়ের নামঃ বৃষ্টি বিলাস
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ
ক্যাটাগরিঃরোমান্টিক উপন্যাস
প্রথম প্রকাশঃ২০০০ সাল
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১০৩
রিভিউকারীঃ বৃষ্টি রাণী দাস
মূল্যঃ ২০০ টাকা
নিজস্ব রেটিংঃ ৮.৫/১০
বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ এর রোমান্টিক উপন্যাস এবং সব থেকে বেশি বিক্রিত বইগুলোর মধ্য একটি। এটি মূলত একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনী যা খুবই সাধারণ কিন্ত লেখক কালির আচড়ে পরিণত করেছেন অসাধারণভাবে। কাহিনীর পরিবারের কর্তা একজন ব্যাংক ক্যাশিয়ার এবং তিনি হঠাৎ করেই পরিবারের সবার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে শুরু করেন আর যার প্রধান কারণ মেয়ের বিয়ে দিবেন এবং পাত্র পছন্দ হয়েছে,কিন্ত এই আচরণ পরিবারের কেও সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি বিশেষ করে ছোট মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে।
শামা হঠাৎ কলেজ থেকে এসে জানতে পারল তার জন্য তার বাবা একজন পাত্র পছন্দ করেছেন যে তার অফিসেই চাকুরী করত এবং সেইদিন তাকে দেখতে আসবে। পাত্রপক্ষ শামাকে দেখতে আসল এবং তারা মেয়ে পছন্দ করে আংটি পরিয়ে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে, কিন্ত পাত্র আতাউরকে শামার পছন্দ না হলেও সে মেনে নেয়। কারণ তার নিজের কোন পছন্দ করা ছেলে ছিল না, তাই পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকেই মেনে নেয় এবং মজা করে তাকে নাম দেয় “খাতাউর”।
আবার শামারা যেই বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই ভদ্র বাড়িওয়ালার নাম মুত্তালিব সাহেব,বয়স পঞ্চান্ন এবং সেই বাড়ির দোতালায় থাকেন, স্ত্রীর সাথে অনেক আগেই বিচ্ছেদ হওয়ায় তিনি একা থাকতেন এবং তার হাঁটু বাকাতে না পারার সমস্যা ছিল এবং তার দেখাশুনা করত কমবেশি নিতচলার শামা মেয়েটা এবং মুত্তালিব সাহেবের কোন এক অজানা কারণে শামাকে ভাল লাগত এবং সে চাইত না শামা তা জানুক।অপরদিকে কারণে অকারণে শামা মুত্তালিব সাহেবের বাসায় আসতেন, কখনো টেলিফোন করতে, কখনো রান্না ভাল হলে সেই খাবার পাঠাতে। মুত্তালিব সাহেব যখন জানলেন শামার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন তার মেজাজ খারাপ হয়।
এইদিকে মাঝবয়সী শামার মাথায় পাগলামি বুদ্ধি আসে এবং আতাউরকে ফোন দেয় তার ছোট বোন এষা সেজে। কথা বলে এবং তার বান্ধবীর বিয়েতে যাওয়ার সময় আতাউরকে সাথে নিয়েই গিফট কিনে এবং বান্ধবীর বাড়ি পর্যন্ত যায়। যদিও বান্ধবীর বিয়েতে অনেক কিছু ঘটে যায়, সেইখানে আবার আশফাকুর রহমান নামের এক ছেলের সাথে পরিচয় হয় যে শামাকে পছন্দ করে বসে। এত কিছু জানতে হলে পড়তে হবে আপনাকে পুরা উপন্যাস “বৃষ্টিবিলাস”।
এই দিকে শামার বাবা যখন পাত্র আতাউরের সম্পর্কে জানতে পারে যে সে পাগল, বছরের কোন এক সময় সে পাগল থাকে তখন তাকে ঘরে তালাবন্ধী করে রাখতে হয় ইত্যাদি শুনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ঠিক করেন শামার সাথে মেয়ের বিয়ে দিবেন না। বান্ধবীর বিয়ে শেষ না করতেই বাবার অসুস্থতার খবর শুনে শামা বাড়ি চলে আসে।
শামা যখন জানতে পারে তার বিয়ে ভেঙে গেছে তখন কিছুটা মন খারাপ হয় তার, কারণ তখন সে অনেক কিছু ভাবতে শুরু করেছে আতাউরকে নিয়ে এমনকি তাদের সন্তানের নাম কি হবে তাও। সেই সময় আবার শামার বান্ধবী তৃণা বিয়ের কথা বলছে আশফাকুর এর সাথে। এখন কোন দিকে যাবে শামা???জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই উপন্যাসটি।
উপন্যাসের পরতে পরতে রয়েছে ভালবাসার ছোয়া, মধ্যবিত্ত পরিবারের টানা পোড়ন নিয়ে গড়া হুমায়ূন আহমেদের একটি সার্থক উপন্যাস। কখনো পাওয়া কিংবা কখনো না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই এই “বৃষ্টিবিলাস”
সবমিলে উপন্যাসটি আমার অনেক ভালো লেগেছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।